| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যা বললেন চরমোনাই পীর


বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যা বললেন চরমোনাই পীর


রহমত ডেস্ক     10 March, 2022     01:00 AM    


গত ৮ মার্চ  বিবিসি বাংলা রেডিওতে সম্প্রচার হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের বিশেষ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে ইসলামী রাজনীতি ও এর ভবিষ্যত, এবং নির্বাচন ও ভোটের হিসেব, ওয়াজ-মাহফিলের সমালোচনা, এমন নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলার সৌজন্যে রহমত টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল:

বিবিসি বাংলা : বিবিসিবাংলায় এবারে আমাদের অতিথি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।যিনি বাংলাদেশের চরমোনাইয়ের পীর হিসেবে অনেকের কাছেই পরিচিত। আমরা বাংলাদেশে পীর বলে যাদেরকে চিনি বা বুঝি, যে চিত্রটা আমাদের সামনে আসে আপনি ওই রকম না,ওই ধরনের পীরের মত না বিষয়টা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
চরমোনাই পীর : পীর ফার্সী শব্দ, আরবীতে বলে মোরশেদ। বাংলা অর্থ পথপ্রদর্শক। এক কথায় আমরা পীরকে মুরব্বী হিসেবে বলতে পারি। পীরের কাজ হলো নায়েবে রসুলের দায়িত্ব পালন করা। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু নিয়ে আসছেন হুবহু ঐটা বাস্তবায়ন, সেভাবে চলা মূলত প্রত্যেক নায়েবে রাসূলদের দায়িত্ব।

বিবিসি বাংলা : আমরা পীর বলে যে চিত্রটা দেখতাম বা দেখি তাদের একটা খানকা থাকে, সেখানে লোকজন যায় ওখানে টাকা পয়সা দেয়?
চরমোনাই পীর : আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীয়ত, ইসলাম যেভাবে রেখে গেছেন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করাটাই হলো নায়েবে রাসূলদের দায়িত্ব। আমরা হুবহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নায়েব হিসেবে সেই দায়িত্ব ঐভাবেই পালনের চেষ্টা করি। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিত্রটা এবং তিনি সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে যেভাবে আমাদেরকে মানবতা, ইসলাম-দ্বীন, সমাজ শিখিেিয়ছেন আমরা ঐভাবে চলা এবং কাজ করার চেষ্ঠা করি।

বিবিসি বাংলা : আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জায়গায় মাহফিল করেন। বিভিন্ন বয়ন দেন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে। শুধু কি এইটাই করেন কাজ?
চরমোনাই পীর : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু নিয়ে আসছেন,ওটা পুরোপুরি আঁকড়ে ধরা আল্লাহ বলছেন এবং যেটা থেকে নিষেধ করছেন তা থেকে ফিরে থাকা। আল্লাহ রাসূল সাঃ যেভাবে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক, আন্তর্জাতিক, ব্যবসা ক্ষেত্রে, কামাই-খরচের ক্ষেত্রে এক কথায় সীরাত-সূরাতের ব্যাপারে নির্দেশনা যেভাবে দিয়েগেছেন হুবহু ঐটাই আমরা করার চেষ্টা করি।

বিবিসি বাংলা : আমি যখন আপনার সম্পর্কে একটু জানার চেষ্ঠা করছিলাম সেখানে দেখলাম যে আপনি একসময় আপনার এলাকা চরমোনাই বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আপনি যখন ইসলামী কর্মকান্ডে যুক্ত আছেন আবার চেয়ারম্যান হতে গেলেন কেন?
চরমোনাই পীর : চেয়ারম্যান এমপি এবং এই যে সামাজিক, জনগনের দায়িত্ব পালন করা এটা ইসলামের বাহিরের কোন অংশ নয়। এটা ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।যার কারণে প্রতিনিধিত্ব যেমন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, সমাজের নেতা ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামরা এভাবে ছিলেন। হুবহু ঐ দায়িত্ব পালনের জন্যই মূলত আমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি।

বিবিসি বাংলা : আপনি কয় বছর ছিলেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ?
চরমোনাই পীর : আমরা প্রায় সাড়ে আট বছরের মতো ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি।

বিবিসি বাংলা : সেঅভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
চরমোনাই পীর : অভিজ্ঞতা আমার খুব ভালোই ছিলো। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই আমার অনেকটাই সমাজের ভিতরে, দেশের ভিতরে, জনগনের ভিতরে কল্যাণের কাজ করতে সুবিধা হয়েছে।

বিবিসি বাংলা : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের একটি রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় আমির হিসেবে আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আপনাদের এই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য টা কি?
চরমোনাই পীর : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেগেছিলেন আমার আব্বাজান সৈয়দ ফজলুল করীম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি যখন দেখলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেঅনেকেই মানুষের কল্যাণের জন্য আসলে রাজনীতি করেনা,ক্ষমতায় যাওয়ার পরে মূলত ব্যক্তি স্বার্থের জন্যই তাদের কার্যক্রম থাকে বলে মূলত আমরা লক্ষ্য করেছি। বিধায় সুস্থধারার এবং জনগণের কল্যাণের জন্যই আব্বাজান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেগেছিলেন। আমরা তার ধারাবাহিকতায় এটাকে আগাইয়া নেয়ার জন্যই তার নিয়ম অনুযায়ী জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা রাজনীতির মাঠে রাজনীতি করছি।

বিবিসি বাংলা : প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের একটা দর্শন থাকে,লক্ষ্য থাকে যে তারা কি করতে চায়। আপনারা কি করতে চান?
চরমোনাই পীর : আমরা চাই দুনিয়াতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, আর আখেরাতে মানুষ মুক্তি পেয়ে চিরস্থায়ী জান্নাত থাকবে,এটি আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

বিবিসি বাংলা : আপনারা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারেন, বা সেরকম কিছু করতে পারেন, তাহলে কি ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা এটিই আপনাদের টার্গেট?
চরমোনাই পীর : ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য তাই নয়। ইসলাম এমন একটা নীতি আদর্শ নিয়ে আসছিল যে নীতি আদর্শের মাধ্যমে বিজাতিরা পর্যন্ত শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। বাস্তবতা হলো- আমি যখন সর্বপ্রথম চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করছিলাম তখন প্রথম পর্যায়ে অনেক হিন্দুরা আমাদেরকে ভোট দেয়নি। তখন ভোট না দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছিল যে আমি যদি চেয়ারম্যান হই তবে তাদের মন্দিরসহ পুজা কার্যক্রম হয়তোবা বন্ধ করে দেব। এরকম একটা মিথ্যা তথ্য তাদের ভিতর রটানোর পরেআমাদেরকে ভোট দেয়নি। চেয়ারম্যান হওয়ার পরে আমাদের কার্যক্রম দেখার পরে তারা আমাদের প্রতি আন্তরিক হওয়ায় এখন সিংহভাগ হিন্দুদের ভোট কিন্ত চরমোনাই ইউনিয়নে আমাদের পক্ষেই তারা দেয়ার পরিবেশ তৈরী করেছে।

বিবিসি বাংলা : আপনি তো দীর্ঘদিন ধরেএ ধরনের মাহফিল করছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন বক্তব্য, ধর্মীয় বক্তব্য আপনি প্রচার করছেন। ইদানিংকালে আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে দেখবেন, গত কয়েক বছরে বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার কারণে নানা ওয়াজ মাহফিল লোকেরা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। যে অনেক হুজুররা এমন ভাবে তারা, মাহফিল বা ওয়াজে বক্তব্য রাখছে। যেটার সঙ্গে আসলে ধর্মের কতটুকু সম্পর্ক আছে? সে প্রশ্ন অনেকে তুলছে। যে আদৌ সেখানে শিক্ষণীয় কিছু আছে কিনা? নাকি সেখানে কৌতুক হচ্ছে। আপনি বিষয়গুলো কিভাবে দেখছেন?
চরমোনাই পীর : আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, মানুষের ভেতর উত্তম মানুষ আলেম, আবার মানুষের মত নিকৃষ্ট তাও সম্বোধন করছেন আলেম। এক শ্রেণীর আলেম হবেন নায়েবে রাপসূল খাঁটি। আর এক শ্রেণীর আলেমদেরকে ওলামায়ে ছু বলা হয়। আমরা আলোচনা রাখছি কুরআন-হাদীস ও শিক্ষণীয় বিষয়ে। যেখানে মানুষের কল্যাণ এবং আখেরাতের মুক্তির কোন আলোচনা থাকবে না এমন মাহফিল বা বয়ান গ্রহণযোগ্য না। কে কি করে বা না করে, এটাকেহয়তোব কেউ সুন্দর জিনিসটাকে নষ্ট করার প্রক্রিয়া হিসেবে এগুলো করতে পারে।

বিবিসি বাংলা : আপনি যেহেতু একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। আপনি আপনার বক্তব্য প্রচার করেন। যারা এগুলো করছে এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আপনি কি সোচ্চার হচ্ছেন?
চরমোনাই পীর : আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করছি। আমরাতো রাষ্ট্রপরিচালনা করিনা, আর আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না। আমরা মানুষকে বোঝানোর ও সচেতন করার চেষ্টা করছি।

বিবিসি বাংলা : আপনার কি মনে হয়?যে যারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে- আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে বলা হয় এগুলো কৌতুকের মত হচ্ছে, নারী বিদ্বেষী, মানবাধিকার বিদ্বেষী, সমাজ বিদ্বেষী কথাবার্তা হচ্ছে। এগুলো আপনাদেরকেও কি প্রভাবিত করে?
চরমোনাই পীর : এখানে আমার একটা কথা আছে, এই বক্তব্য গুলো নিয়ে মন্তব্য করছে কারা? ইসলাম সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা আছে কিনা ?কুরআন হাদিস সম্পর্কে তাদের জানা আছে কিনা? যদি তাদের জানা থাকে তাহলে ইসলাম ও কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে যদি তা অযৌক্তিক হয়, তবে তাকে আমরা কখনোই আশ্রয় প্রশ্রয় দেইনা। তবে বুদ্ধিজিবীর নামে এক শ্রেনীর মানুষ ইসলাম ও আলেমদেরকে কলঙ্কিত করার জন্য সমালোচনা করে। এটাও কিন্তু আমাদেরকে দেখতে হবে কারা এর সমালোচনা করে। এসব সমালোচকদেরকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।

বিবিসি বাংলা : আপনারা যারা ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, এটা ঠিক যে এ দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বা ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ তারা মুসলিম। ধর্ম নিয়ে তাদের অত্যন্ত অত্যন্ত অনেক বেশী আবেগ। কিন্তু একই সাথে আবার আরেকটা গোষ্ঠী বাংলাদেশের মধ্যে আছে যাদের সম্পর্কে জানি যারা ইসলামী রাজনীতি করে তাদেরকে নিয়ে সন্দেহ আছে, তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা আছে?
চরমোনাই পীর : অনেক আছে যেটাকে ইসলাম মুসলমান বিদ্বেষী জামাত।দুনিয়ার ইতিহাসে যেটা লক্ষ্য করছি, যে বিভিন্ন সময়ে ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে তারা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচার-মিডিয়ার মাধ্যমে সমালোচনার একটা পরিবেশ তৈরি করে। এরকম কিছু আছে যেটা আমরা বলবো ইসলাম ও মুসলমান বিদ্ধেষী চক্র। কিন্তু আসলে ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলামের ভালো দিকটা তুলে ধরুক। ইসলামের যে আদর্শ আল্লাহর রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃযা নিয়ে আসছিলেন যার মাধ্যমে বিজাতিরা পর্যন্ত তার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিল সে ব্যাপারে তাদের প্রসংশা আমরা শুনিনা। তাদের মুখে কখনোই আমরা কল্যাণমুখী কথা লক্ষ্য করি না। তারা ইসলামের ভালো দিক নিয়েকখনো কথা বলে না। শুধুমাত্র বিরোধিতা করে যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলা : আপনার যে রাজনৈতিক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিগত নির্বাচনে হাপাখা মার্কায় ৩০০ আসনের প্রার্থী দিয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে আপনারা অংশগ্রহন করছেন। বাংলাদেশের যারা ইসলামী রাজনীতির সঙ্গেসম্পৃক্ত নয়, তারা অনেকে মনে করেন যে আপনাদের মত দলগুলো যদি কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয় তাহলে বাংলাদেশ হয়তো আরেকটা আফগানিস্তানের মতো হবে?
চরমোনাই পীর : এ বিষয়টা আমরা তাদের এই খেয়ালটা ভালো নজরে দেখি না। কারণ গ্রাম্য একটা প্রবাদ বাক্য আছে যে “চুন খাওয়ার পরে যদি মুখ পুড়ে যায়-তবে দধি দেখলে ভয় পায়” আসলে এই সমালোচনাগুলো করে স্বার্থন্বেষীরা। আমি যখন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলাম, তখন বাস্তবতা হলো এতটুকই যে সেখানে আপনি খবর নিয়ে দেখবেন যে সেখানে হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা বসবাস করে। তারা আমাদের এলাকা পরিচালনার ব্যাপারে কিভাবে শান্তি পেয়েছে এটা আপনার বাস্তব দেখলেই বুঝবেন। আমি বলব যে মিডিয়া জগত বা একশ্রেনীর কুচক্রী ইসলাম এবং ইসলামী আদর্শ এবং হক্কানি ওলামায়ে কেরামদের বিতর্কিত করার জন্য অসত্য তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। ধর্ম নিয়ে তাদের অনেক আবেগ আছে, যেকোনো ধর্মীয় বিষয় তাদের সামনেনিয়ে আসলেতারা আবেগ-আপ্লুত হয়। আপনাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাটা হচ্ছে-আপনারা সে আবেগটাকে কাজ করে রাজনীতি করছেন?
চরমোনাই পীর : না এটা আমাদের ব্যাপারে শুধু বলবে কেন? আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত। সেখানেও তাদের ধর্মীয় আবেগটাকে কাজে লাগিয়ে তো বর্তমান সরকার ক্ষমতায়। যারাই ধর্ম মানবে, তাদের ধর্মীয় ব্যাপারে তো আবেগ থাকবেই। ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগানো তো কোন বিষয় নয়।আপনি মুসলমান, ইসলামের ব্যাপারে আপনার দুর্বলতা থাকবেই। হিন্দুর তাদের ধর্মের ব্যাপারে দুর্বলতা থাকবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ধর্মের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে ক্ষমতায় আছে।নিজেরা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও বাস্তবে তারা ধর্ম নিপেক্ষতা বাস্তবায়ন করছে না।

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির যে ধারা, সেখানে আমরা দেখি যে বহুদল আছে, আলাদা আলাদা জোট আছে, আলাদা গ্রুপ ও আছে সেখানে।এতো দল, এতা জোট, এতো গ্রুপ কেন? যদি ইসলামের আদর্শ একটাই হয়ে থাকবে তাহলে সবাই একসাথে থাকতে পারছে না কেন?
চরমোনাই পীর : একটা ব্যাপার হলো- ঢাকা যাওয়ার পথ কিন্তু অনেকটাই থাকে। লক্ষ উদ্দেশ্যএকটা থাকে। যেমন উদাহরণ আমাদের ইসলামী নীতি আদর্শ বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে আমাদের একটা থিম আছে। আবার আরেকজনে ঐটা বাস্তবায়নে তাদের আরেকটি থিম থাকতে পারে, কিন্তু লক্ষ ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা। এর ভিতরে আবার কিছু ইসলামের নামে তারা অনৈসলামী কার্যকলাপের ভেতরে লিপ্ত আছে সেটাও নজরে রাখতে হবে। কিন্তু যারা নাকি মূলত ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য চিন্তা করে তাদের ব্যাপারটা কিন্তু ঐ রুপটাই আপনি ধরতে পারবেন।

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত কি?
চরমোনাই পীর : বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত আমি অত্যন্ত উজ্জ্বল লক্ষ্য করছি। কারণ যে দেশের ভিতরে শতকরা ৯২ জন এর মত মুসলমান বসবাস করে,মুসলমানরা তাদের ধর্ম ইসলাম নিয়ম অনুযায়ী লালন-পালন করবেন এবং সে দিকে ধাবিত হবে এটাই বাস্তবতা।

বিবিসি বাংলা : কিন্তু ভোটের হিসাব-নিকাশ কি তাই বলে?
চরমোনাই পীর : ভোটের হিসাব নিকাশ তোআমরা যেটা লক্ষ্য করছি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী দিন দিন তার কার্যক্রমটা আল্লাহর রহমতে তার কার্যক্রমবৃদ্ধি হচ্ছে। আমরা প্রথম যখন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলাম পরবর্তীতে দেখি অনেক তার সংখ্যা এবং ভোটের দিক থেকে অনেক বেড়েই চলছে আল্লার রহমতে। সম্ভাবনা অনেক ভালো।

বিবিসি বাংলা : আমরা যেটা দেখছি যে, আপনি যখন বিভিন্ন জায়গায় মাহফিল করেন, আপনার প্রচুর সামর্থ্যক বা ফলোয়ার বা যারা আপনার মাহফিলগুলোতে যোগ দেয় হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন জায়গায়। সেটা আপনার মাহফিলের দিক। আপনি যখন ধর্মীয় বিষয়গুলো প্রচার করেন। কিন্তু যদি আপনারা রাজনীতিতে যখন ভোটের মাঠে কন্টেষ্ট করেন আপনাদের সেই ভোটগুলো থাকে না কেন?
চরমোনাই পীর : ভোটগুলো থাকেনা এটা আমি বলবো না।বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা যেটা লক্ষ করছি বর্তমানে দেমে যে নির্বাচন চলছে এটা প্রশ্নবিদ্ধ।এখানে ভোটের হিসাব-নিকাশ করাটা কঠিন ব্যাপার। সঠিকভাবে কেউ ভোটের হিসেব নিকাশ করতে পারবেনা । বাস্তবতা যেটা লক্ষ করছি, যেখানেই স্বচ্ছ, সুন্দরভাবে নির্বাচন হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ভোটের সংখ্যাটা অনেক বেড়ে গেছে। অনেক যাযগায় আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভও হয়েছে।

বিবিসি বাংলা : আপনার যে ফলোয়ার, যারা আপনার ওয়াজ মাহফিল শুনতে চায়, তারা নির্বাচনে আপনাদেরকে ভোট দেয়, দিবে?
চরমোনাই পীর : ভোট দিবে এবং বেশিরভাগই এখন ভোট দেয়া শুরু করেছে।

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশের সামনে নির্বাচন আসছে। আর দুই বছরেরমধ্যে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে শুনতে পাচ্ছেন এবং কে কার সঙ্গে থাকবে, কি ধরনের জোট হবে এগুলো নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। আপনার অবস্থানটা কি?
চরমোনাই পীর : আমাদের অবস্থান তো পরিষ্কারভাবে আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি। বর্তমান সরকার যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করেছে, সামনের দিকে করার চেষ্টা করছে এটা কখনোই বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর নয়। কারণ স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে যারাই ক্ষমতায় থেকে জাতীয় বা কোন ধরনের নির্বাচন করেছে, সে নির্বাচন নির্বাচন স্বচ্ছ বলে কেউই প্রমাণ করতে পারেনাই। সমস্ত নির্বাচনগুলোই প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে যে নির্বাচন কমিশন আইন পাস করছে এরা সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে এই আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

বিবিসি বাংলা : আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনার দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আপনারা কি বিএনপির দিকে থাকবেন? নাকি আওয়ামীলীগের দিকে থাকবেন?
চরমোনাই পীর : আমাদের তো একটা নীতি আদর্শ আপনি বলছেন ইসলামী আন্দোলন। আমাদের নীতি আদর্শ ইসলাম।বিএনপি,আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য যে দলগুলো রয়েছে, আমরা পরিস্কার বলেছি- নো আওয়ামীলীগ,নো বিএনপি, জাতীয় পাটির্, ইসলাম ইজ দ্যা বেস্ট। আমাদের চিন্তা-চেতনা হলো ইসলাম। যারাই এর সঙ্গে এক থাকবে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারে।

বিবিসি বাংলা : আমরা তো দেখছি আওয়ামীলীগ সরকার আপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অনেকে মনে করেন। আপনারা যখন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছেন গত নির্বাচনে আপনাদের হাতপাখার প্রার্থীরা যেভাবে প্রচার প্রচারণা করেছে, কোথাও বাধার সম্মুখীন হয় নাই। কিন্ত বিএনপি হয়েছিল। তার মানে তো বুঝা যাচ্ছে সরকারের আপনাদের প্রতি সহানুভূতি আছে?
চরমোনাই পীর : নাএটা হয়তোবা কেউ মনে করতে পারে। আমরা বলবো ঐ ঘরানার যারা আছে তারা মনে করতে পারে। এটা আমরা মনে করি না। কারণ বর্তমানে যে আমরা নির্বাচনে মাঠে আছি, সেখানে তো দেখছি আমাদের উপরে জুলুম নির্যাতন বর্তমান সরকারের দলীয় লোকরা এবং তাদের প্রার্থীরা যে ধরনের আচরণ করেছে, কিসের কারণে কিভাবে কি করতেছে এটা তাদের চিন্তা আসলে মূলত। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- অল্প দিনের ব্যবধানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং যে আদর্শ আমরা লালন ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি খুব শীগ্রইমানুষ এদিকে আসবে।